ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ , ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে হেরে শতবর্ষের লজ্জায় লিভারপুল ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, হঠাৎ আক্রমণ চলে আসতে পারে-প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে-প্রেস সচিব ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে-ফখরুল ন্যায়বিচারের দাবিতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গ্রুপ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অর্ধশত শিক্ষক আহত ১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল নির্বাচন নাও হতে পারে, জুলাই সনদ আগে হতে হবে-ডা. তাহের কমিশনের সুপারিশ বাদ দিয়ে দুদক সংশোধন খসড়া অনুমোদনে টিআইবির উদ্বেগ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই- নাহিদ ইসলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফের আলোচনায় ডিজিটাল লেনদেনে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের সম্ভাবনা বিএনপিতে অস্থিরতা সারাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সমাজসেবা কার্যালয় কাজ করছে : ধর্ম উপদেষ্টা ১৪ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অতিরিক্ত এসপি বরখাস্ত ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ- সালাহউদ্দিন নারীর অদম্য সাহসেই হবে জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশÑ পরিবেশ উপদেষ্টা ১৭৫% ক্যাশ ডিভিডেন্ডে সন্তুষ্ট বিনিয়োগকারীরা প্রেমিকের পরামর্শে স্বামীকে হত্যা নববধূ আটক
* সব দলই চায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসুক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফের আলোচনায়

  • আপলোড সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৪:৫০:৩০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৪:৫১:৩১ অপরাহ্ন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফের আলোচনায়
* আপিল মঞ্জুর করা উচিত, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা সমীচীন : শিশির মনির * আগামী নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই : নাহিদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আবারও পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সর্বশেষ আপিল মঞ্জুর করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইলেন জামায়াতের সেক্রেটারির আইনজীবী। গত এক দশক আগে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ যেটি সংবিধান থেকে মুছে দেওয়া হয়েছিল, সেটি আজ আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। আদালত, সংসদ ও রাজপথে সমানতালে ঘুর-পাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন নির্বাচনের সময় কে থাকবে ক্ষমতায়। শুধু তাই নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে করা আপিলের ওপর বুধবার পঞ্চম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে এ শুনানি হয়েছে। শুনানি করেছেন বিএনপির পক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী রোববার (২নভেম্বর) নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষে শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কারণেই দেশ গভীর সংকটে পড়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিতর্কের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক আস্থার সংকট। কেউ কেউ মনে করেন, সংবিধান সংশোধন ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আবার অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হলে সাংবিধানিক সমাধান খোঁজা যেতে পারে। এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর ভাষায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরুক বা না ফিরুক মূল প্রশ্ন হলো জনগণের আস্থা। যদি রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে না পারে, তবে যে ব্যবস্থাই আসুক, সংকট থেকেই যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর করে এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। শুনানিতে তিনি বলেছেন, পুনরুজ্জীবিত হলেও এটি মুহূর্তে কার্যকর সম্ভব নয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন আইনজীবী শিশির মনির। আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, আগামী নির্বাচন যেটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এই নির্বাচন ত্রয়োদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আছে, ওই ব্যবস্থায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। এ-সংক্রান্ত সংবিধানের আগের ৫৮ অনুচ্ছেদে যে পরিস্থিতিতে পদ্ধতিটি প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে, সে পরিস্থিতি আপাতত নেই। আগের যে বিধান ছিল সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই সরকার গঠিত হবে। সংসদ ভেঙে গেছে আরও এক বছরের বেশি সময় আগে। বর্তমানে কোনো সংসদ নেই, তাই সংসদ ভাঙারও প্রশ্ন আসে না। তিনি বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর করার আইনি কোনো বিধান বাংলাদেশে নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন করার ম্যান্ডেট আছে। নতুন সংসদের সিদ্ধান্তে আগের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আগের মতো থেকে যায় অথবা জুলাই সনদে উল্লেখিত নতুন কোনো প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা হলে সেই পদ্ধতিতে পরবর্তী সময় থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখনকার আলোচনায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধু নির্বাচনের প্রশ্ন নয়, এটি গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। এরইমধ্যে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে এসেছিলাম আমাদের কতগুলো রাজনৈতিক কনসার্ন নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে এই মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন, অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নিতে হবে। অর্থাৎ একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় তাদের যেতে হবে। এ জন্য প্রথমেই যেটা প্রয়োজন হবে, প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ একটা ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান সরকারকে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে। গত ২৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ সেøাগান এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। তাহলেই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ও একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মূহুর্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমরা বিচার বিভাগকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জায়গায় টেনে আনতে চাই না। এর নানা ক্ষতিকর দিক আমরা অতীতে দেখেছি। তিনি আরও বলেন, এটা ঐকমত্য কমিশনের বিষয় যেহেতু, এটা গণভোটে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনেই আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। ১৯৯৬ সালে জনগণের দাবিতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। তিনটি জাতীয় নির্বাচন ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এই ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই তিন নির্বাচন তুলনামূলকভাবে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের রায় ও সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার। তখন যুক্তি ছিল-গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থি। আজকে ২০২৫ সালে এসে সেই বিতর্ক আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনই এখন একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কিনা, তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল বিভাগে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে গত ২২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এ প্রশ্ন তোলেন। এ সময় আদালতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়ে ১৪তম জাতীয় নির্বাচন থেকে তা কার্যকর চেয়ে আপিল বিভাগে শুনানি করেন। গত মঙ্গলবার প্রধান বিএনপি জানিয়েছিলো, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় চায়। তবে একদিন পর সরকার বলল, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাই বলেনি। তবে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় যা বুঝেছি, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাননি। অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে-সেটাই বলেছেন। আমরা তাদের বলেছি, আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকাই পালন করছি। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের নিশ্চয়তা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন। জনপ্রশাসন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে বড় ধরনের বদলির ব্যাপারটি তিনি নিজে দেখবেন। তবে আইন উপদেষ্টার এ বক্তব্যে বিপরীত কথাই বললেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এই সরকারকে শিগগিরই কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে তিনি এই মন্তব্য করেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতিসত্বর তাদেরকে কেয়ারটেকার মুডে চলে যেতে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের জায়গায় অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, পুরোপুরি নিরপেক্ষ অবস্থানে যাওয়া। ওদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলামও। তিনি একধাপ এগিয়ে বললেন, দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির আবহ হচ্ছে। সরকার বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মান ভুলুণ্ঠিত হয়েছে সন্দেহ নাই। এ সরকারের অধীনে সততা নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন আর সে ভয় নাই। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছুদিন অস্থিতিশীল ছিল, অমুক তমুক এর কথায় অনেক কিছু হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন আর সে ভয় নাই। দুইটা কেয়ারটেকার সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা ও স্বাধীনতা পেয়েছি। (পত্রিকায়) তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির আবহ হচ্ছে দেখছি। আপনাদের ভয় নেই। এদিকে, সরকার-বিএনপি পালটাপাল্টি বক্তব্যের মাঝে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট থেকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক শুনানি করছেন। এর আগে মঙ্গলবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের প্রথমদিনের শুনানি হয়। গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অর্ধশত শিক্ষক আহত

জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অর্ধশত শিক্ষক আহত